House Design & Development Tips: বাড়ি নির্মাণ করার কথা ভাবছেন??
বাড়ি নির্মাণ করার কথা ভাবছেন??
তাহলে প্রথমে কোন বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন? একটি বাড়ি নির্মাণ করার বেশ কয়েকটি ধাপ আছে। সর্ব প্রথম ধাপ হচ্ছে ডিজাইন করানো। একটি পরিপূর্ণ ডিজাইন না করানো পর্যন্ত আপনি বাড়ির কাজের প্রথম ধাপ সম্পন্ন করতে পারবেন না। পরিপূর্ণ ডিজাইন ছাড়া আপনার কাজের শুরুটাই খারাপ হবে এবং পুরো কাজটিই আপনার মনের মতন করে হবে না।
ঢাকার বাইরে এখন ব্যাপক হারে দেখাে যাচ্ছে অসম্পূর্ণ ডিজাইন দিয়ে কাজ করাতে । এর মূল কারন হচ্ছে অনভিজ্ঞ নির্মাণ প্রকৌশলি প্রতিষ্ঠান দ্বারা ডিজাইন করানো। দেখা যায় ১০ থেকে ১৫ টি A4 সাইজের কাগজে কিছু লাইন টেনে দিয়ে ডিজাইন এর কাজ সম্পন্ন করা হয়। এই কাগজগুলো খুবই অল্প টাকায় পাওয়া যায় বলে ভূমি মালিকরা এদের পেছনে ছোটেন।
কিন্তু আসল সমস্যা শুরু হয় বাড়ি নির্মাণ করা শুরু হলে। ডিজাইন অসম্পূর্ণতার কারনে বার বার উক্ত প্রকৌশলিকে প্রজেক্টে ডাকতে হয় এবং তাকে আলাদা ভাবে টাকা দিতে হয়, এছাড়া প্রায় মিস্ত্রিরা ভুল ভাল কাজ করে চলে যায় ডিজাইনে সবকিছু না থাকার কারনে। এসব সমস্যার কারনে আমরা আজকে জানাবো একটি পরিপূর্ণ ডিজাইন এ কি কি থাকা উচিত।
১) আর্কিটেকচারাল ডিজাইন
একটি আর্কিটেকচারাল ডিজাইনে ফ্লোর প্লান, ফার্নিচার লেআউট, এলিভেশন এন্ড সেকশন, ওয়ার্কিং ডিজাইন, ফলস স্লাব এবং লিন্টেল, বিম লেআউট, স্লাব আউট লাইন, ডোর এন্ড উইন্ডো ডিটেইলস ইত্যাদি থাকবে। এই প্রত্যেকটি বিভাগে আলাদা করে পেইজ হবে এবং ডিজাইন গুলো আলাদা আলাদা ভাবে উল্লেখ করে দেয়া থাকবে। কন্সট্রাকশন কাজ করার সময় মিস্ত্রিরা এগুলোকে ফলোআপ করবেন। আর্কিটেকচারাল ডিজাইন সম্পূর্ণ না থাকলে প্রায়ই দেখা যায় মিস্ত্রিরা ইচ্ছেমতন গাথুনি করে ফেলে যা পরবর্তিতে ভাঙতে হয় এবং আবার করতে হয়, এতে অর্থ, সময় এবং শক্তি সবকিছুরই ব্যাপক অপচয় হয়।
২) স্ট্রাকচারাল ডিজাইন
একটি পরিপূর্ণ স্ট্রাকচারাল ডিজাইনের জন্য প্রথমেই লাগবে সয়েলটেস্ট এর রিপোর্ট। রিপোর্ট ছাড়া যদি কোন ডিজাইন করা হয় তবে তা হবে সম্পূর্ণ বাস্তবতা বিবর্জিত একটা কাল্পনিক ডিজাইন। সয়েল টেস্ট ছাড়া বাড়ি করার মানে হচ্ছে আপনি আপনার কোটি টাকা সম্পূর্ণ রুপে পানিতে ফেলে দিলেন। ডিজাইনে থাকবে লেআউট প্লান এবং ফাউন্ডেশন এর ডিজাইন, যদি পাইলিং হয় তবে তার ডিটেইলস, সিড়ির ডিজাইন থাকবে, সেপটি ট্যাংক, রিজার্ভ ট্যাংক, প্রতিটি ফ্লোরের আলাদা বিম সেকশন এবং ডিটেইলিং, ছাদ এর রড এর ডিটেইলস এবং কলাম এর রড এর ডিটেইলস। একটা ভালো স্ট্রাকচারাল ডিজাইন কখনোই বেশি রড ব্যবহার করবে না আবার কম রডও ব্যবহার করবে না। আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ঠিক কত দিন পর্যন্ত এই ভবন ব্যবহার করতে পারবেন তা নির্ভর করবে এই ডিজাইনের উপরে তাই খুব সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত এই ডিজাইনটি নিয়ে।
৩) থ্রিডি ডিজাইন
বিল্ডিং ডিজাইন এর একটি গুরুত্ব পূর্ণ পার্ট হচ্ছে থ্রিডি ডিজাইন। বিল্ডিংটি দেখতে ঠিক কেমন হবে , বাস্তবে কতটুকু ভালো লাগবে তার নিশ্চয়তা দেয় এই থ্রিডি ডিজাইন। আর্কিটেক্ট যিনি ডিজাইন করেছেন তিনি এই কাজটি করে থাকেন। থ্রিডি ডিজাইনে আর্কিটেক্ট সম্পূর্ণ ডিজাইনটির একটি বাস্তবতার রুপ দেন। থ্রিডি ডিজাইন ছাড়া দেখা যায় মিস্ত্রি তার মনের ইচ্ছে মতন ফিনিশিং করে যা আপনার কোটি টাকার কাজকে একটা কদর্য রুপ দেয়।
৪) ইলেকট্রিক্যাল ডিজাইন
প্রায়ই মফস্বলে দেখা যায় ইলেকট্রিক্যাল ডিজাইন ছাড়াই বিল্ডিং এর কাজ শুরু হয়। পরে যখন ছাদ ঢালাই করা হয় তখন ইলেকট্রিক্যাল মিস্ত্রি তার ইচ্ছে মতন পাইপ ফেলে। পরবর্তিতে যখন সুইচ করার দরকার হয় তখন শুরু হয় কাটাকাটি, এমনও হয় বীম কাটা হয়, কলামের সাইড কাটা হয়। এটা বিল্ডিং এর স্ট্রাকচারাল নিরাপত্তার জন্য অত্যান্ত ঝুকিপূর্ণ একটি কাজ । পুরো ভবনটিকে ঝুকির মুখে ফেলে ইলেকট্রিকের তার টানা হয়। অথচ ইলেকট্রিক্যাল ডিজাইন থাকলে এগুলোর কিছুই করার প্রয়োজন হয় না।
৫) প্লাম্বিং ডিজাইন
একই ব্যাপার ঘটে এই ক্ষেত্রেও। বাড়ি করার পরে বাথরুমের পাইপ টানার জন্য যদি সেই বাড়ির ফ্লোর হাতুড়ি মেরে ভাঙ্গা লাগে তবে রসেই বাড়ি না বানিয়ে কুঁড়ে ঘর বানানোই তো ভালো তাই নয় কি?? প্রায়ই দেখা যায় এই কাজটা করতে মিস্ত্রিদের। এতে সদ্য বানানো বাড়িটিতে প্রচুর ক্রাক তৈরি হয় যা বাড়ির স্থায়িত্ব অনেকটা কমিয়ে দেয়।
৬) এস্টিমেট এন্ড কস্টিং
আপনি বাড়ি বানাবেন তাই জমি রেডি করলেন, ডিজাইন করলেন, মিস্ত্রি ঠিক করলেন, সব কিছু রেড এখন মালামাল কিনবেন। কিন্তু আপনি জানেনই না কি পরিমাণ মালামাল কিনবনে। ইঞ্জিনিয়ারকে জিজ্ঞেস করলেন সে বললো ৫ টন রড কিনেন, মিস্ত্রি বললো না ৭ টন কেনেন। দেখা গেল আপনি কিনলেন ৬ টন রড লাগলো ৪.৫ টন , মিস্ত্রি ভাবলো এত রড যখন সেভ হইলো তাইলে কিছু রড বেশি করে পরের ছাদে দিয়ে দেই। আপনার পুরো দুই টন রডের টাকা জলে গেলো। এভাবে শুধু মাত্র এস্টিমেট না করার কারনে অনেক বাড়ির মালিকে লক্ষ লক্ষ টাকা নস্ট হচ্ছে কিন্তু যদি তারা ডিজাইনের সাথে এস্টিমেট করিয়ে নিতো তবে অনেকটাই সেইভ করতে পারতো। এছারা বাজেট সম্পর্কে একেবারে জাস্ট একটা আইডিয়া দেবে এই এস্টিমেট এন্ড কস্টিং
৭) গভরমেন্ট অথরিটি এপরোভাল ডিজাইন
এটার জন্য প্রায়ই যাওয়া হয় পৌরসভা বা সিটিকর্পরেশন এর ইঞ্জিনিয়ারদের কাছে। দেখা যায় তারা তাদের মন মতন করে একটা ডিজাইন করে সাবমিট করে দেয় এবং সেটাই পাশ করিয়ে নিয়ে আসে । . দেখা যায় ওয়ার্কিং এর সাথে সেই ডিজাইনের কোন মিল থাকে না। অথচ এটা দায়িত্ব থাকে যারা ভবনের ডিজাইন করবে তারাই এটা করে দেবে। এরকম অসাঞ্জস্য ডিজাইনের জন্য হয়তো পৌরসভার বর্তমান ইঞ্জিনিয়ার আপনাকে কিছু বললোনা কারন তার সাথে আপনি লেনদেন করেছেন, কিন্তু যদি সে বদলি হয়ে (যেটা অবশ্যই হবে) অন্য কোন ইঞ্জিনিয়ার আসে এবং সে যদি লেনদেন না করে তবে আপনি কি করবেন, বাড়ি ভেঙ্গে ফেলবেন??
একটা মানুষ তার জীবনে কয়টি বাড়ি করতে পারে। একটি কি দুইটি। আর সেই বাড়িটিতে জীবনের সমস্ত ইনকাম এবং পরিশ্রম ঢেলে দেয় সেই মানুষটা। এই বাড়িটাতে একটা জীবনের স্বপ্ন থাকে, আশা থাকে এবং ভরসা থাকে। আর আপনার সেই আশা, ভরসা এবং পরিশ্রমের পুরোটুকুই নষ্ট হয়ে যায় যদি সেই বাড়িটি অসম্পূর্ণ ডিজাইনের কারনে খারপ মানের হয়।
তাই অনুগ্রহ করে বাড়ি নির্মাণ করার আগে ডিজাইন করানোর ব্যাপারে অভিজ্ঞ প্রকৌশলি প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলুন। হয়তো অল্প কিছু টাকা বেশি খরচ হবে সেখানে, কিন্তু সেই টাকার কারনে হয়তো আপনার তার দশ গুন বেশি টাকা অপচয়ের হাত থেকে বেচে যাবেন এবং আপনি অত্যান্ত সুন্দর একটি বাড়ি পাবেন যার স্থায়িত্ব হবে আপনার দুইটি প্রজন্ম সেখানে নিশ্চিন্তে বসবাস করতে পারবে।
দিচ্ছে উপরোক্ত সবগুলো সার্ভিস একই সাথে এবং আমাদের রয়েছে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ৪ ৩ টির বেশি জেলায় প্রায় শতাধিক বাড়ি করার অভিজ্ঞতা। আমাদের রয়েছে এক ঝাক অভিজ্ঞ আর্কিটেক্ট, ইঞ্জিনিয়ার দের টিম। আমাদের রয়েছে সব ধরনের কাজের অভিজ্ঞতা । তাই আপনি নিশ্চিন্তে আমাদের উপর আপনার বাড়ির ডিজাইন করার ব্যাপারে নির্ভর করতে পারেন।